মেরিনারদের পাসপোর্ট : সর্তকতা জরুরি

Comments Off on মেরিনারদের পাসপোর্ট : সর্তকতা জরুরি

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

বছর দুয়েক আগে পরিচিত এক জুনিয়র পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যায় পড়েন। সমস্যা বলতে, তার পাসপোর্টটি মেরিন কমিউনিটিতে পরিচিত একজন সিনিয়র জমা রাখেন । পরবর্তীতে পার্সপোর্ট ফেরত চাইলে নানা গড়িমসি শুরু করেন। তার আচরনে ফেরত  না দেয়ার অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

আমি জানিনা, বাংলাদেশের কতগুলো এজেন্সি মেরিনারদের পাসপোর্ট জমা রাখে। তবে ‘পাসপোর্ট’ জমা রাখার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। একজন মানুষের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত তথ্য বহন করে তার পাসপোর্ট। ফেসবুক ভেরিফিকেশন থেকে ব্যাংক একাউন্ট সবকিছুই পাসপোর্ট দিয়ে করা যায়।

অতিসম্প্রতি একটা ট্রাভেল এজেন্সিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে যারা ক্লায়েন্টের পাসপোর্ট দিয়ে মানি লন্ডারিং করতো। এছাড়া অরিজিনাল পাসপোর্ট দিয়ে ফেইক ব্যাংক একাউন্ট, ফেসবুক একাউন্ট করার সুযোগ থাকে। সাধারণত পাসপোর্ট দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট করতে গেলে সেভাবে অফিসাররা মিলিয়ে দেখেন না ।

সবাই ধরে নেয়, পাসপোর্টের মতো ব্যক্তিগত জিনিস থার্ডপার্টি কারো কাছে থাকবেনা। এছাড়া সব এজেন্সিতেই প্রত্যকের ইন্ডিভিজুয়াল ফোল্ডারে পাসপোর্ট সাইজের ছবি থাকে যাতে বিভিন্ন সময়ে ভিসার আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলে, কেউ অপরাধমুলক কাজ করলে কিছু না জানা নির্দোষ ব্যক্তিও ফেঁসে যেতে পারেন।  

একটি নির্দিষ্ট এজেন্সি হয়ে জাহাজে কয়েকবার জয়েন করলে এমনিতেই পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস বা আস্থা তৈরি হয়। তবে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমাদের মেরিন কমিউনিটির অনেকেই আছে, যারা নিজেদের কমিটমেন্টের মূল্য দিতে জানে না, কথা দিয়ে কথা রাখেন না।

মূলত মেরিনারদের অন্য কোন কোম্পানি বা এজেন্সিতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করতেই অনেক এজেন্সি ডকুমেন্ট জমা রাখে। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট ছাড়াও অন্য অনেক ম্যান্ডেটরি ডকুমেন্ট যেমন CoC, CDC বা STCW বেসিক কোর্সের একটা সার্টিফিকেট জমা রাখতে বা জমা দিতে পারেন, কিন্তু কখনোই পাসপোর্ট নয়।

 আমি যতদূর জানি, আইনগতভাবে বিনাকারণে একজনের পাসপোর্ট আরেকজন রাখতে পারেনা। কিছু কারনে পাসপোর্ট অন্যর হাতে যেতে পারে।  যেমন, কোন দেশের ভিসা করানোর জন্য হলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাসপোর্ট রাখা যেতে পারে, তাও হতে হবে পাসপোর্ট হোল্ডারের অনুমতি সাপেক্ষে। অথচ অনেক সময় অনেক এজেন্সি পাসপোর্ট বা ডকুমেন্ট জমা রেখে কোন রিসিটও দেয়না, যা আরও বিপজ্জনক।

এজেন্সি যদি ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে বলে, তার কাছে জমা দেয়া পাসপোর্ট বা কোন ডকুমেন্ট নেই- তাহলে তা ভুল প্রমাণ করার কোন উপায় বা ডকুমেন্ট আপনার কাছে নেই।

তাই মেরিনার বা এজেন্সি, যারাই পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাকেন তাদেরকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া উচিত। আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, পাসপোর্ট, ব্যক্তিগতভাবে অজানা, অচেনা কারো কাছে জমা রেখে ভবিষ্যতে নিজেকে বিপদে ফেলার মতো বোকামি করবেন না। এমনিতেই মেরিনারদের পদে পদে ভোগান্তির শেষ নেই। নতুন করে ভোগান্তির শিকার যাতে না হই   সে জন্য  সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (৪৭/ই)

Comments are closed.