খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত ওয়েস্টার্ন মেরিন, সম্পদ নিলামে

0 comments

খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত ওয়েস্টার্ন মেরিন, সম্পদ নিলামে

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের অন্যতম জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের সম্পদ নিলামে তুলেছে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার পক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এই নিলাম নোটিশ। সেখানে আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে আগ্রহী ক্রেতাদের তাদের দরপত্র দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়।

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের সম্পদ নিলামে তুলেছে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। ছবি: ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের সম্পদ নিলামে তুলেছে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। ছবি: ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড

রাইসুল ইসলাম৩ মিনিটে পড়ুন

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সময় সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার সুমন ধর।

তিনি জানান,

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের কাছে ঢাকা ব্যাংকের সুদসহ পাওনা ৯৪ কোটি ৪৭ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৭ টাকা ৬৮ পয়সা। আর এ পাওনার বিপরীতে বন্ধকী হিসেবে রয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের মালিকানায় থাকা তাদের চট্টগ্রামের স্টার্ন্ড রোডের হেড অফিস আমিন ফিউচার পার্কের অফিস স্পেস এবং ওয়েস্টার্ন ক্রুজ নামের একটি জাহাজ। বার বার তাগাদা দিয়েও পাওনা আদায় না হওয়াতেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক এই বন্ধকী সম্পদ নিলামে তুলেছে।

আরও পড়ুন: শবনমের রিকশা পেইন্টের তৈজস যাচ্ছে দেশের বাইরেও!

এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার পত্রিকায় প্রকাশিত নিলাম নোটিশে বলা হয়েছে, ‘ওয়েস্টার্ন মেরিন সার্ভিস লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, আগ্রাবাদ শাখা চট্টগ্রামের অনুকূলে উভয় সম্পত্তি বন্ধক রেখেছেন এবং আমমোক্তারনামা দলিল সম্পাদন করেছেন। উক্ত ঋণগ্রহীতা কোম্পানি তিনটি ঋণ বাবদ ব্যাংকের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় উক্ত পাওনা আদায়ের নিমিত্তে উক্ত বন্ধকী দলিল ও আমমোক্তারনামায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বন্ধককৃত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে বিক্রয়ের জন্য সীল মোহরকৃত দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে।’

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘আগামী ৪ অক্টোবর বিকেল চারটার মধ্যে চট্টগ্রামের ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখায় রক্ষিত বাক্সে দরপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া সেদিন বিকেল চারটার সময় দরপত্র দাতাদের সামনে দরপত্র বাক্স খোলা হবে।’

নোটিশে বন্ধকী সম্পত্তি হিসেবে আমিন ফিউচার পার্কে অবস্থিত ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের প্রধান কার্যালয়ের সপ্তম তলার ৩ হাজার ৭৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং একই ভবনে অবস্থিত ৫২৮ বর্গফুটের একটি পার্কিং স্পেসের পাশাপাশি এমভি ওয়েস্টার্ন ক্রুজ নামের ২৬৬ মেট্রিক টন ওজনের একটি যাত্রীবাহী নৌযান বা হারবার ক্রাফটের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হতো পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধে দফায় দফায় ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটি পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানে।

এর আগে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি  জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নাম। অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা খেলাপি।

আরও পড়ুন: চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু পঞ্চাশে, পৌঁছালেন সফলতার শিখরে

ঢাকা ব্যাংক ছাড়াও ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ব্যাংক এশিয়ার ৫০৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ২০০০ সালে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রবেশ করে। মান সম্পন্ন সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানির মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ছড়িয়ে পড়ে তাদের সুনাম। নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, কেনিয়া, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতসহ বিশ্বের ১২টি দেশে ৩৩টি জাহাজ রফতানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।  প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিকের।

তবে ২০২০ সালের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।  প্রতিষ্ঠানটির ঘাড়ে জমা হয় বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা। এছাড়া কোভিড মহামারির ধাক্কাও তীব্রভাবে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির ওপর।

Leave a Reply