পায়রা_বন্দর_নিয়ে_ভারত_এবং_চীনের_সাথে_ভারসাম্য

Comments Off on পায়রা_বন্দর_নিয়ে_ভারত_এবং_চীনের_সাথে_ভারসাম্য

পায়রা_বন্দর_নিয়ে_ভারত_এবং_চীনের_সাথে_ভারসাম্য

From facebook Defence Research Forum- DefRes 21 August 2019

আজকের লেখা শুধুই সংবাদ জানানো এবং সামান্য বিশ্লেষণ। যারা এই সম্পর্কিত পূর্বের সব লেখাগুলি পড়েছেন তাদেরকে আগেই জানিয়েছি যে বাংলাদেশ বন্দর নির্মাণে চীন ভারত কাউকেই রুষ্ট করেনি।

আজ সেই বিষয়ে বিশ্লেষণে না গিয়ে বরং চীনের BRI এবং পায়রা বন্দর নিয়ে কি রাজনীতি চলছে সেটা নিয়ে বিস্তর ব্যাখ্যা তুলে ধরব আগামী পোস্টে।

যাইহোক, ইতোমধ্যে আপনারা জেনে গেছেন দেশের অন্যতম বড় টার্মিনালের পায়রায় নির্মাণ করতে যাচ্ছে ভারত।

ভারত বাংলাদেশের চীন ঘেষা নীতিতে ২০১৬ সালের পর থেকে অসস্তি বেশ প্রকাশ্যেই প্রদর্শন করছে। ২০১৬ সালে চীনের সাথে $২৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হলে ভারত বেশ প্যানিকড হয়ে পড়ে।

এই অঞ্চলে ভারতের চিন্তা বাংলাদেশকে বা পাকিস্তান কে নিয়ে যতটা তার থেকে বেশি চীনের প্রভাব নিয়ে। আর চীন নিরবে স্ট্রিং অব পার্লস, ওবর বা বি আর আই এর মত স্ট্রাটেজিক লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। চীনের শত শত বিলিয়ন ডলার চীনের প্রভাব বিস্তার বাড়াবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতের সামর্থ্য নেই চীনকে টেক্কা দেবার। সেই পরিমাণ অর্থ ভারতের নেই।

কিন্তু এ সত্ত্বেও ভারত বেশ ভ্রু কপালে তুলে দেবার মত কাজ করে বসে। চীন বাংলাদেশ $২৪ বিলিয়ন ডলার চুক্তির পর ভারত দ্রুততার সাথে প্রথমে $২ বিলিয়ন ডলারের Line of credit -ii এবং $৪.৫ বিলিয়ন ডলারের line of credit -iii এর চুক্তি করে বাংলাদেশের সাথে। মোট বাংলাদেশের সাথে $৭.৫ বিলিয়ন ডলারের তিনটি লাইন অব ক্রেডিট এর চুক্তি করে। যেখানে ভারত নিজ দেশেই বিদেশি ঋন পাবার জন্য মরিয়া সেখানে বাংলাদেশ কে $৭.৫ বিলিয়ন ডলার ঋন দেবার মত সাহস ভারত দেখিয়েছে শুধু চীনের ভয়েই।

কিন্তু ভারতের ঋনে নানা শর্ত জুড়ে দেবার কারনে বাংলাদেশ শুধুমাত্র LOC-1 এর কিছু টাকা ভারতের কাছ থেকে ঋন নেয়। দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঋন চুক্তির কোন টাকায় ভারত ছাড় করেনি। প্রশ্ন হল কেন করেনি?

উত্তর টি বেশ জটিল। নয়ন চ্যাটার্জির মত কন্সপাইরেসি থিওরি লিখলে অনেক কিছুই লেখা যায়। মূর্খ পাবলিক সেগুলা আরো ভাল ভাবেই খাবে।

কিন্তু বাস্তবতা হল, সোনাদিয়া বন্দর নিয়ে Conflict of Interest বেশ চরমে পৌছে। চীনের অবস্থান বেশ নমনীয় ছিল। কারন চীন হয়ত আগে থেকেই বুঝে ফেলেছিল বাংলাদেশ কি করতে যাচ্ছে। কিন্তু ভারত এতটাই ভীত ছিল যে কোন ভাবেই সোনাদিয়া বন্দর চীনকে দিতে দিবে না। ঘোর আপত্তি তুলেছিল ভারত। বন্দর যদি করতেই হয় তবে যেন ভারতকে কাজ দেয়া হয় সেই লক্ষ্যে তৎপরতা চালিয়েছিল ভারত। এই সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল খুব সম্ভবত দ্যা ইকোনমিস্ট এ পড়েছিলাম ( আমি সঠিক মনে করতে পারছিনা কোন পত্রিকা) যে বাংলাদেশ এমন একটা চিপায় পড়েছে যে অবকাঠামো বিনিয়োগের সব থেকে বড় বাধা আসে চীন এবং ভারতের স্বার্থের কথা ব্যালান্স করতে গিয়ে। অর্থাৎ এখানে কিছু করতে গেলেই দুই টি দেশ বেশ নড়েচড়ে বসে।

তবে বাংলাদেশ এখানে খুব সুক্ষ্ম চাল চেলেছিল। যেহেতু সোনাদিয়া দ্বীপ এবং মাতারবাড়ি দ্বীপের মধ্যে দুরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার এবং সোনাদিয়া দ্বিপের থেকে মাতারবাড়ি দ্বীপ চট্টগ্রামের ৩৫ কিলোমিটার কাছে তাই বাংলাদেশ সোনাদিয়া বন্দরের প্রকল্প নিয়ে আর এগোয়নি। সমাধানটি এসেছিল জাপানের হাত ধরে।

মহেশখালীর যোগাযোগ সোনাদিয়া থেকে উন্নত এবং অবস্থান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে চ্যানেলের গভীরতা বেশি। এবং এই দ্বীপের আয়তন সোনাদিয়া দ্বিপের থেকে দ্বিগুন বড়। এই বিষয়গুলি বিবেচনায় আনার পর, বাংলাদেশ মাতারবাড়িতে নির্মানাধীন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ হাবের জন্য যে ছোট বন্দর করা লাগত সেটাকেই আরো বড় করে পূর্নাঙ্গ বন্দরে রুপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। দ্বীপের আয়তন বড় হবার কারনে এখানে ২৪০০০ একর জমি বরাদ্ধ করা হয় ইকোনমিক জোনের জন্য যেটা সোনাদিয়ার মত ছোট দ্বীপে সম্ভব ছিল না। যেহেতু এই কাজটি ভারত বা চীন কাউকেই দেয়নি বাংলাদেশ এবং এটি জাপানকে দিয়েছে তাই এটা নিয়ে ভারত বা চীন কেউ আপত্তি তোলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এর ভেতরে বেশ পরে মাতারবাড়ি বন্দরের সাথে চীনকেও জুড়ে দেয়া হয়।

আর পায়রা বন্দর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্য গেম খেলে। এখানে ভারতকে দেয়া হয়েছে ১২০০ মিটার বা ১.২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টার্মিনালের কাজ যেটা করতে খরচ হবে ৫১৫০ কোটি টাকা। তবে শর্ত হল এটি ভারতের দেয়া ঋনের line of credit -3 থেকেই টাকার জোগান হবে। যেহেতু এই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারর খুব বেশি চিন্তিত তাই কোন ভাবেই এই সুযোগ ভারত হাতছাড়া করবে না। ফলে তাদের প্রতিশ্রুত ঋনের অর্থ ভারত নিজ গরজেই ছাড় করে এই টার্মিনাল নির্মান করবে। ঋনের টাকা ছাড়ের জন্য ভারতকে তেলাতে হবেনা বাংলাদেশের।

টার্মিনালটি হব্র মাল্টিপারপাস যেখানে ৫৫০ মিটারের তিনটা বার্থে সাধারণ কার্গো উঠানামা করা হবে। ৪০০ মিটারের দুটি বার্থে বালু এবং কয়লা জাতীয় জিনিস হ্যান্ডেল করা হবে এবং অবশিষ্ট ২৫০ মিটারের বার্থে খাদ্যশস্য উঠানামা করা হবে। ২০২২ সালের ভেতর এই টার্মিনালের কাজ শেষ হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। এখানে এলএনজি টার্মিনাল ও নির্মান করা হবে।

কিন্তু কথা হল, ভারত কে এই টার্মিনাল দিয়েছে কিন্তু চীনকে কি দিয়েছে? চীনকে দুটি টার্মিনালের কাজ দেয়া হয়েছে। এবং বন্দরের প্রধান অবকাঠামো নির্মানের জন্য ইতোমধ্যে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান China Harbour Engineering Company এবং China State Construction Engineering Corporation এর সাথে চুক্তি করে ফেলেছে। এখানে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। দিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিবকে যখন ভারতীয় সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিল বাংলাদেশ কেন চীনের OBOR এ যুক্ত হবে? তিনি বলেছিলেন OBOR নিয়ে বাংলাদেশ চিনের ভেতর যা হবে সেটা নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা করার যৌক্তিকতা নেই। কারন বাংলাদেশ শুধু মাত্র তার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যই পূর্নাঙ্গ সমর্থন করে OBOR কে। আসলে এখানে বাংলাদেশ বিতর্ক এরিয়ে সুন্দর ভাবে চীনকেই যুক্ত করেছে মাতারবাড়ি এবং পায়রা বন্দরে। কিন্তু ভারতের এখানে আপত্তি তোলার সুযোগ রাখা হয়নি।

২০২৮ সাল নাগাদ পায়রা বন্দর হবে বাংলাদেশের সব থেকে বড় বন্দর যেখানে ৩০ লক্ষ ২০ ফিটের কন্টেইনার বহন করা হবে। ওই সময় চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডেল করা হব্র ২০ ফিটের ২২ লক্ষ ৩০ হাজার কন্টেইনার এবং মংলা বন্দরে ৪৬ হাজার কন্টেইনার।

#wasimahin

Comments are closed.